গল্প_সংসার পর্বঃ১ | chokherjole.blogspot.com

 

খাতুন মানুষের বাসায় কাজ করে, এর পরেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এমন অবস্থায় এস এস সি পরিক্ষা দেওয়া তাদের বড় মেয়ে কোহিনূরকে তাদের কাছে বোঝা মনে হতে শুরু করেছে।

গল্প_সংসার পর্বঃ১ | chokherjole.blogspot.com

গল্প_সংসার পর্বঃ১ | chokherjole.blogspot.com

গল্প_সংসার পর্বঃ১ | chokherjole.blogspot.com
গল্প_সংসার পর্বঃ১ | chokherjole.blogspot.com

-নিজের প্রতি নিজের ঘেন্না হয় আমার। ধর্ষিত

হবার পরেও আমি এই কথা অন্যকে বলতে

পারি না। ইদানীং তার স্পর্শ আমাকে

বাচঁতে দেয় না। আমি মরে যেতে চাই।

কিন্তু আমি মরে গেলে আমার পরিবারের

কি হবে?

(কথাগুলো ভেবে আরও একবার কেদে নিলো

কোহিনুর)

.

-এই কোহিনুর ঘুম থেকে ওঠো নি এখনও?

-জ্বি আম্মা উঠেছি।

-আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসো।

ভদ্রমহিলা সম্পর্কে কোহিনূরের শাশুড়ি।

.

নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, খোলা চুল,

কোহিনূরের সৌন্দর্যকে আরও বিকশিত করে

তুললো।

কোহিনূরকে দেখে কে বলবে যে মেয়েটা

একজন রিক্সাচালকের মেয়ে? বিয়ের ছয়

মাস হয়েছে মাত্র,কিন্তু এই টুকু সময়েই

নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছে সে।

(ছয় মাস আগে)

প্রচন্ড সুন্দরী হওয়ায় কোহিনূরকে নিয়ে

বেশ ঝামেলায় পরে যান কোহিনূরের বাবা

কাশেম মিয়া। একে তো অভাবের সংসার,

ছয় ছেলেমেয়ের দ্বায়িত্ব কাশেমের ওপর।

কোহিনূরের মা জমিলা খাতুন মানুষের

বাসায় কাজ করে, এর পরেও সংসার

চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এমন অবস্থায়

এস এস সি পরিক্ষা দেওয়া তাদের বড় মেয়ে

কোহিনূরকে তাদের কাছে বোঝা মনে হতে

শুরু করেছে। একে বিদেয় করতে পারলেই

তাদের একটু খরচ কমে যাবে এই চিন্তা

থেকেই কোহিনূরকে বিয়ে দেবার কথা

ভাবতে থাকেন তারা।

কিছুদিন পরেই এলাকার বিরাট নামকরা

আমির আলি যে কিনা আমির গ্রুপ অফ

ইন্ড্রাস্ট্রির কর্নধান, তার পুত্রের জন্য

কোহিনূরকে পছন্দ করেন।

প্রস্তাব পাঠান কাশেম মিয়ার কাছে। এমন

বড়লোকের ঘড়ে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব

পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে সাথে সাথে

বিয়েতে রাজি হয়ে যান কাশেম মিয়া।

কিছুদিন পরেই কোহিনূরকে বিয়ে দিয়ে

দেওয়া হয়। বিয়ের সকল খরচ বহন করেন

আমির আলী। এমন কি বিয়ের পরে

কোহিনূরের বাবার হাতে পাচ লাখ টাকাও

তুলে দেন তিনি।

কোহিনূরের কেন যানি ব্যাপার গুলো

অস্বাভাবিক লাগছিল।

বাসর রাতেই জীবনের সব চেয়ে বড় ধাক্কা

খায় মেয়েটা। কেন না তার বিয়ে হয়েছে

সাইফের সাথে কিন্তু বাসর ঘরে প্রবেশ

করছে অন্য কেউ! যার নাম কাইফ।

এলাকার সবাই যানে আমির আলির একটাই

ছেলে, যার নাম সাইফ। কিন্তু বাসর রাতে

কোহিনূর আবিষ্কার করে যে আমির আলির

আরও একটা ছেলে আছে যার নাম কাইফ।

আর এই ছেলেটাই আমির সাহেবের বড়

ছেলে।

কাইফকে তার মা রুমে ঢুকিয়ে রেখে যান।

কাইফ নিজের রুমি কোহিনূরকে দেখে একদম

রেগে যায়। বিছানায় সাজানো গোলাপ

গুলোকে প্রথমে সে নিচে ফেলে এর পর

ধাক্কা দিয়ে কোহিনূরকে।

কোহিনূর ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুক্ষণ

স্তম্ভিত হয়ে থাকে,এর পর বুঝতে পারে

কাইফকে দেখতে স্বাভাবিক মনে হলেও

বাস্তবে সে স্বাভাবিক নয় পাগল।

হতভম্ব হয়ে থাকা কোহিনূর একটু পরেই

অনুভব করতে থাকে তার পায়ের অসহ্য

ব্যাথা। দু'চোখ ভিজে ওঠে তার। এই ছিলো

তার কপালে! তখনই কাইফ কোহিনূরের

দিকে আসতে থাকে, পাগলটাকে দেখেই

ভয়ে আঁতকে ওঠে কোহিনূর। উঠে দারাতে

পারছে না তবুও বসে থেকেই আসতে আসতে

পেছাতে শুরু করে। পাগলটা মাথা চুলকাতে

থাকে আর বলে "তুমি কি আমার পুতুল বন্ধু?

যাকে বাবা আমার জন্য কিনে এনেছে?"

ভয়ে ভয়ে মাথা নেড়ে বলে "হ্যাঁ "

-ওমা এই পুতুল আবার কি মিষ্টি করে কথা

বলে! আচ্ছা পুতুল বন্ধু তোমার কি নাম?

-কোহিনূর।

-কুহু। তুমি আমার কুহু পুতুল বন্ধু কেমন?

-হ্যা।

-এমা তোমার পানি চোখে কেন? কেন?

-ও কিছু না।

-বেশ বেশ। আচ্ছা তুমি কি হাটতে পারো?

পারো?

(কোহিনূর কি বলবে, তার গলা জরিয়ে

আসছে কান্নায়।কোহিনূর কে চুপ থাকতে

দেখে পাগলটা একটা চড় বসিয়ে দেয়

কোহিনূরের গালে। এইবার শব্দ করে কেদে

ওঠে কোহিনূর। পাগলটা হাত তালি দেয় আর

হো হো করে হাসে)

এভাবেই এক এক করে 6 মাস কেটে যায়।এক

বিছানাতেই এখন কাইফ আর কোহিনূর

থাকে।

কখনও হয় পাগলটা তাকে মারে,কখনো

টয়লেটে আটকে রাখে, কখনো আবার এটা

ওটা ছুরে মারে,খাট থেকে ফেলে দেয়।

কিন্তু গত রাতে কোহিনূর অনুভব করে তার

বুকে কারও হাত। ঘুম ভাংতেই দেখে কাইফ।

কাচের বেগুনি চুড়ি গুলো এক এক করে

ভাংতে থাকে। হাতেরও বেশ কিছু স্থান

কেটে যায়। কোহিনূর চিৎকার করতে পারে

না,কেন না সমাজের চোখে সকলের চোখে

কাইফ তার স্বামী। তার শরীরে পুর্ণ

অধিকার রয়েছে কাইফের।

কিন্তু এই স্পর্শ কোহিনূরকে বাচতে দিচ্ছে

না। সে কোনো ভাবেই ব্যাপারটা ভুলতে

পারছে না। রাতের ঘটনার পরে কোহিনূর

শাওয়ার নেয়। গোছলখানায় ইচ্ছে মতন

কেদে নেয়। নিজের প্রতি ঘেন্না কাজ

করছে তার। সে কাইফকে কোনো ভাবেই

নিজের স্বামী ভাবতে পারে না,তাই তার

এই ঘেন্না কাজ করছে।

ওদিকে কাইফ ঘটনার পর থেকেই কেমন যেন

একটু বদলে গেছে।

গোসল করে বের হবার পরেও কাদছিল

কোহিনূর। কোহিনূরকে কাদতে দেখে

-কুহু পুতুল তুমি কেদ না! আমিও কেদে

ফেলবো তোমার সাথে।

(কখনো কোহিনূরের সাথে এভাবে কথা বলে

নি কাইফ। এমন কি সে নিজেও কোহিনূরের

সাথে কেদেছিল)

তখনই তার শাশুড়ি এসে ডেকে যায় নিচে

আসার জন্য।

.

আবারও একটা রাত। কোহিনূরের একদম ইচ্ছে

করে না কাইফের পাশে বা একই বেডে

ঘুমোতে। কিন্তু কি করবে। এটা তার

নিয়তি। কেন না তার ছোট পাচ ভাই

বোনের সকল খরচ আমির আলি বহন করছে।

এমন কি আরও পাচ লাখ টাকা কাশেম

মিয়াকে দিয়েছে একটা দোকান কেনার

জন্য।

কোহিনূর যদি এই পাগলকে ছেরে চলে আসে

তাহলে তার পরিবারের সবার আবারও সেই

আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। যা

কোহিনূর একদম চায় না।

প্রতিদিনের মতো আজকেও এক গ্লাস দুধ আর

কিছু মেডিসিন নিয়ে কাইফের সামনে

দারিয়ে আছে কোহিনূর। প্রতিদিনের মতো

আজ একদম চিল্লাচিল্লি দৌড়াদৌড়ি না

করেই সব খেয়ে নেয় কাইফ। কোহিনূর অবাক

হয়। তবে কিছু বলে না।

ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোহিনূর কাইফের পাশে

গিয়ে শুয়ে পরে। তবে আজ ঘুম আসছে না

তার। কাইফ যখন ঘুমের ঘোরে এপাশ-ওপাশ

করে তখন বিছানার এক পাশে আতংকিত

হয়ে শুয়ে থাকে কোহিনূর।

.

আজ একটা ব্যাপার কোহিনূরের মাথায়

কাজ করছে। আর তা হলো "এই ছয় মাসে এক

বারও দেখলাম না কাইফকে ডাক্তার

দেখাতে। তাহলে কাইফকে রোজ কিসের

মেডিসিন খেতে দেওয়া হয়? "

তবে ব্যাপারটা এতো বেশি চিন্তার বলে

তার মনে হয় নি। আর যেহেতু তার শাশুড়ি

এই মেডিসিন গুলো কাইফকে খাওয়াতে

বলে তাই কোহিনূরের আর এসব চিন্তা করে

লাভ নেই।

কাইফের মা রুপা প্রচন্ড ভালো একজন

মহিলা।

.

কাইফ এখন প্রায়েই কোহিনূরের কথা

শোনে। কোহিনূরকে আগের মতো জ্বালাতন

করে না। মারেও না।

ইদানিং কোহিনূরেরও কাইফকে ভালো

লাগে। ছেলেটা যদি পাগল না হতো তবে

হাজারে একটা ছেলেই বলা হতো কাইফ

কে। জোড়া ভ্রু,বাম গালে টোল, বড়

চোখ,লম্বা মুখ, ধবধবে ফর্সা। সব মিলিয়ে

বেশ সুদর্শন পুরুষ।

.

কিছুদিন ধরে প্রায়েই ছোট ছোট ব্যাপারেই

কাইফের ছোট ভাই সাইফ কোহিনূর কে

স্পর্শ করার চেষ্টা করে। কোহিনূরের আশে

পাশে বেশি ঘুরঘুর করে।বাজে ভাবে

তাকায়। সব মিলিয়ে এই ছেলেটার ছায়াও

মারাতে ইচ্ছে হয় না কোহিনূরের।

.

আজ সকাল থেকেই কাইফকে কেমন অন্যরকম

লাগছে। কারণটা অবশ্য বুঝে উঠতে পারছে

না কোহিনূর।

এখন আর কোহিনূর কাইফকে ভয় পায় না।

কোহিনূর প্রায় রাতেই সাইফের মাথায়

হাত বুলিয়ে দেয়। ভালোই লাগে

কোহিনূরের।

আজ রাতেও বরাবরের মতো মেডিসিন

খাওয়ানোর পরে কাইফের পাশে ঘুমিয়ে

যায় কোহিনূর।

আজকেও কোহিনূর অনুভব করে কারও স্পর্শ

তার শরীরে। আজকে আর ঘেন্না হচ্ছে না

কোহিনুরের। চোখ খুলেই সে চিৎকার দিতে

চাইলে সাইফ তার মুখ চেপে ধরে।

কোহিনূরের চোখ বেয়ে অশ্রু গরিয়ে পরছে।

এদিকে সে যথা সম্ভব চেষ্টা করছে

সাইফের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করার

কিন্তু পারছে না। পাশেই কাইফ ঘুমাচ্ছে।

খুব চেষ্টা করেও কোহিনূর পারছে না

নিজেকে তার স্বামীর ভাইয়ের হাত থেকে

বাচাতে।

এদিকে ধস্তাধস্তি হচ্ছেই,এক পর্যায়ে

সাইফকে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে নামতে

গিয়ে নিজের আধ-খোলা শাড়িতে আটকে

নিচে পরে যায় কোহিনূর। সাইফ এবার

নিচে নেমে এসেই কোহিনূরের চুলের

মুঠিতে ধরে। তখনই কাইফ ফুলদানি দিয়ে

সাইফের পিঠে আঘাত করে। সাইফ

কোহিনূরকে ছেরে দিয়ে ব্যাথায় কঁকিয়ে

ওঠে।

এদিকে কোহিনূরের শাশুড়ি ততক্ষণে রুমে

উপস্থিত। তার আর বুঝতে বাকি রইলো না

যে কি হয়েছে। সাইফের দুই গালে থাপ্পড়

দিয়ে রুম থেকে বের করে দেন রুপা। এর পরে

উনি নিজেও বের হয়ে যান।

কোহিনূর নিচে বসেই কাদছে। কাইফ

বিছানা থেকে নেমে এসে কোহিনূরকে

বলে

-কুহু তুমি কেদো না। কেদো না। এদিকে

এশো।

(কোহিনূর কাইফের দিকে তাকায়,ছেলেটা

ওকে উপরে উঠে আসতে বলে)

চলবে.....

গল্প_সংসার পর্বঃ১ | chokherjole.blogspot.com

#চোখের_জলে 

#প্রেম ও #বিয়ের_গল্পের_কথা 

#chokherjole