#গল্প_সংসার 4th_prt | chokherjole.blogspot.com

 

কাইফকেও আমি ওই কাঠের পায়া দিয়ে আঘাত করি। ভেবেছিলাম ছেলেও বুঝি মোরে গেছে। তখনই হাসমত (তখনের কাজের লোক ছিলো, আর এখন সে ড্রাইভার) এলো হাতে দলিলের কাগজ নিয়ে।

#গল্প_সংসার 4th_prt | chokherjole.blogspot.com

#গল্প_সংসার 4th_prt | chokherjole.blogspot.com

#গল্প_সংসার 4th_prt | chokherjole.blogspot.com
#গল্প_সংসার 4th_prt | chokherjole.blogspot.com

#গল্প_সংসার 4th_prt

.

-হ্যাঁ তুমি চলে এসো (সারা)

(কোহিনূর সারার অফিসের বিল্ডিংএর নিচে দাড়িয়ে কল দিয়েছিল। তাই সারার কেবিনে চলে আসতে 5 মিনিটের বেশি সময় লাগলো না)

-আপু আসবো?

-হ্যা আসো। কি ব্যাপার? কবে বলেছিলাম আমার সাথে দেখা করার কথা, তো এতো দেরি করলে কেন?

- আপু একটু ব্যাস্ত ছিলাম আর কি।

-আচ্ছা, শোনো আমি যেই ইনফরমেশন তোমাকে নিতে বলেছিলাম, তা নিয়েছো?

-জ্বি আপু।

-তা ইনফরমেশন পাওয়ার পরে তোমার কি মনে হচ্ছে? ওহ হ্যা তুমি যে আমার সাথে প্রায়ই যোগাযোগ করছো এটা অন্য কেউ যেন না জানতে পারে।

-আপু ইনফরমেশন অনেক গুলোই পেয়েছি। আপু আমার সব চেয়ে বড় সন্দেহটাই সত্যি হয়েছে রুপা কাইফের আপন মা নয়! আর ওই বাক্সের কথা তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম! সাইফের থেকেও ইনফরমেশন পেয়েছি আপু। আপু আমার হাতে তো বেশি সময় নেই তাই এই যে নাও একটা ফাইল দিয়ে গেলাম।আর সাথে আমার লেখা দুইটা নোট। এগুলো পরেই আসা করি রহস্যটা তুমি বুঝে যাবে।

-চলে যাবে এখনি?

-হ্যা।

-সাবধানে থেকো। যেহেতু তোমাদের বাড়ির সাধারণ এক মালি খুন হয়েছে, সেহেতু তোমার ওপরেও আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।

-আপু চিন্তা করবে না। আজ তাহলে উঠি।

-আচ্ছা।

.

ঘরে এসে কোহিনূর দেখে সকলেই কাইফের রুমে। চাকর-বাকর থেকে শুরু করে কাইফের দেখাশোনা করার জন্য যেই নার্সটাকে রাখা হয়েছিল সবাই কাইফকে ঘিরে বসে আছে। কোহিনূরের হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। রুমে এসে জিজ্ঞেস করলো

-কি হয়েছে? আপনারা সকলে কাইফের রুমে?

-শপিং করাটা কি খুব জরুরী ছিলো তোমার জন্য কোহিনূর? (রুপা)

-আম্মা আমার প্রয়োজন ছাড়া তো আর আমি বের হবো না। যেহেতু শপিং এ গিয়েছিলাম এর মানে আমার প্রয়োজনীয় জিনিস গুলোই নিয়ে এসেছি।

-কাইফের চেয়েও দেখছি তোমার প্রয়োজন গুলোই তোমার কাছে বেশি! তা না হলে কি তুমি এভাবে ও কে একা রেখে চলে যেতে?

-মা ও ঘুমচ্ছিল।তাই আমি কাউ কে বিরক্ত না করে চলে গিয়েছিলাম। আপনারা কেউ বলবেন কি হয়েছে কাইফের?

-কি আর হবে ছেলেটা তোমাকে খুজতে খুজতে স্টোর রুমে যায় এবং পরে গিয়ে মাথায় ব্যাথাও পায়।

- কই দেখি?

-হু এসো।

( কোহিনূর রুমে আসতেই সকলে রুমের বাহিরে চলে গেলো)

-কুহু?

-হ্যা কাইফ বলো।কি হয়েছে?

- একটু ছাদে চলো না!

(কোহিনূর একটা কথাও না বলে কাইফের হাত ধরে ছাদের দিকে হাটা দেয়। তখন কাইফ কোহিনূরকে বলে,

- তোমাকে একটা কথা বলবো।

-বলো কাইফ।

-...............)

কাইফ যা বললো তা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো কোহিনূর। ভাবতএই অবাক লাগছে, কিভাবে এমন কাজটা করতে পারলেন উনি! তবে এখন এসব ভাববার সময় নেই। অপরাধীকে ধরতেই হবে,শাস্তি অপরাধীকে পেতেই হবে। কোহিনূর আর কাইফ রুমে আসে। কোহিনূর বলতে থাকে "রহস্যের শেষটা কালকেই হবে। অপরাধী বাচতে পারবে না"

.

রাত প্রায় দুইটা। বাহিরে শব্দ শোনা যাচ্ছে। শব্দে ঘুম ভাংগে কোহিনূরের। দরজা খুবে বের হতেই ওর মাথায় রিভলবার ধরে তিনজন মুখোশ পরা মানুষ। তাদের হাতে একটা রুমালও আছে। কোহিনূরকে অজ্ঞান করার জন্যই সম্ভবত কুলোফ্রম লাগানো হয়েছে রুমালটায়।

তখনই কাইফ এসে রিভলভার হাতে থাকা লোকটার হাত থেকে রিভলবার কেড়ে নেয়। সাথে সাথে ঘরের ঝার বাতিটি জ্বলে ওঠে। এর পর একটা একটা করে সব কয়টা লাইট।

সারাহ,সাইফ,আহাদ,আসফা­ক এবং মাসুদ দো'তলায় উঠে এসে সেই তিনজন মুখোশ

পড়া লোকের পেছনে দাড়ান এবং একে একে প্রত্যেকের মুখোশ উন্মোচন করেন। প্রথম জন হচ্ছে ড্রাইভার, দ্বিতীয় জন সাইফ আর তৃতীয় জন বা এর প্রধান হচ্ছে আমির আলি!

আমির আলিকে দেখে একদম হকচকিয়ে যায় কোহিনূর, কেননা সে ভেবেছিল প্রধান অপরাধী হবে রুপা! কিন্তু নাহ।

এদিকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ায় ড্রাইভার আর সাইফ কান্নাকাটি শুরু করেছে। তাদের এই চিৎকার চেচামেচিতে রুপা রুম থেকে বের হয়। দেখে সাইফ,ড্রাইভার আর আমিরের হাতে হাতকড়া পড়ানো। রুপা সারার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে

-আপনারা আমার স্বামী, আমার সন্তানকে এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?(রুপা)

-জেলের হাওয়া খাওয়াতে। (সারা)

-কি বলছেন আপনি! আপনি নির্দোষ মানুষগুলোকে এভাবে ধরে নিয়ে যেতে পারেন না।

-কে দোষী আর কে নির্দোষ তা দেখার কাজ পুলিশের, আপনার না।

-কি দোষ করেছে আমার স্বামী! আমার ছেলে (কাদছে রুপা)

-আচ্ছা এক কাজ করি,আপনার সামনেই তাহলে জিজ্ঞাসাবাদ করি আপনার স্বামীকে।

(তিনটি চেয়ার নিয়ে সেই চেয়ারে তিনজন কে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সারাহ)

-আমির আলি, বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী আপনি কি মার খাবার আগেই সব বলতে শুরু করবেন না কি মার খাওয়ার পরে বলবেন?

-বলছি বলছি-

30 বছর আগের কথা-

আমি আবু হায়দার সাহেবের বিশাল প্রতিষ্ঠান কাব্য গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির

ম্যানেজার পদে চাকুরী পাই। চাকুরীর এক বছরের মধ্যেই হায়দারের হৃদয় জয় করে ফেলি। উনি আমার ওপর প্রচন্ড খুশি হয়ে তার একমাত্র মেয়ে কাব্য-এর সাথে আমার বিয়ের ব্যাবস্থা করে। কিন্তু কাব্য একদম রাজি হয় না আমাকে বিয়ে করার জন্য। এদিকে কাব্য মা মরা মেয়ে হওয়ায় বাবার অতী আদরের। আমি

ভেবে নিয়েছিলাম বাপের কথা রাখতে হলেও মেয়ে হয়তো আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে। কিন্তু না। মেয়ের সাথে বাপও ঘুরে যায়। বলে আমার সাথে তার মেয়ের বিয়ে দেবে না। সেইদিন অফিসে আমি ওভারটাইম করছিলাম,আর প্রচুর কাজ থাকায় হায়দারও অফিছে ছিল। অপেক্ষা করছিলাম অফিসের সকলের চলে যাওয়া পর্যন্ত। ঘন্টা তিন-এক পরেই সবাই চলে গেল অফিস থেকে। বুরো বের হলো নিজের কেবিন থেকে তখন আমি তাকে বললাম

যে আমি তার মেয়েকে অনেক ভালো বাসি। সে চাইলেই তার মেয়ে রাজি হবে আমাকে বিয়ে করতে। কিন্তু নাহ। বুড়ো সোজাসাপ্টা বলে দিলো তার মেয়ের পছন্দের উপরে সে কথা বলবে না। ব্যাস আমার মেজাজ বিগড়ে গেলো। বুড়োর গলা টিপে ধরলাম, আর বললাম "তুই এখনি তর মেয়ে কে বল যে তোর লাস্ট ইচ্ছা সে যেন আমাকে বিয়ে করে"

বুড়ো জীবন বাচানোর জন্য তাই করলো। মেয়েকে ফোন করে বললো "মা রে আমি মনে হয় আর বাঁচবো না,আমার কসম খা যে আমি জা বলবো তুই তা করবি? তুই আমির কে বিয়ে করে নে মা,সেটাই আমার শেষ ইচ্ছা"

পুলিশ কেস হয়েছিল তবে পুলিশেরা আমার কিছুই করতে পারে নি। আর খুনটা যে আমি করেছিলাম এটা কেউই জানতো না।

এদিকে বাপের শেষ ইচ্ছা পুরন করলো কাব্য। বিয়ের দুই বছর পর আমাদের প্রথম সন্তান হয় কাইফ।

আমি ভেবেছিলাম কাব্য তার স্থাবর অস্থাবর সকল সম্পদের মালিক আমাকে করে দিবে। কিন্তু নাহ। আমাকে ভুল প্রমান করে কাব্য তার সকল সম্পদের মালিক করে গেলো তার ছেলে কাইফকে।

এর মানে দিন শেষে আমি কি পেলাম? আমার কি রইলো? কিছুই না।

স্টোর রুমে আমার আর কাব্যর মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিল উইল নিয়ে। এর মধ্যে আমার মাথা বিগড়ে গেলো এবং পুরনো চেয়ারের ভাংগা পায়া দিয়ে কাব্যের মাথায় আঘাত করে বসলাম। মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে লাগলো এদিকে এই ঘটনা নিজের চোখে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো কাইফ। কাইফকেও আমি ওই কাঠের পায়া দিয়ে আঘাত করি। ভেবেছিলাম ছেলেও বুঝি মোরে গেছে। তখনই হাসমত (তখনের কাজের লোক ছিলো, আর এখন সে ড্রাইভার) এলো হাতে দলিলের কাগজ নিয়ে। সে এসে দেখে ফেললো যে আমি খুন করেছি। আমি কিছু বলার আগে হাসমত বলে উঠলো "স্যার আমি কাউকে বলবো না আমাকে মেরে ফেলবেন না।স্যার এই দলিলটা দেখেন আগে"

আমি কাপা হাতে দলিলটা নেই। পড়তে থাকি।

আমি জানতাম কাব্য সকল সম্পদ তার ছেলের নামে দিয়ে গেছে কিন্তু এটা যানতাম না যে সে এটাও দলিল করে গেছে "21 বছরের পুর্বে যদি কাইফের মৃত্যু হয় তবে সকল সম্পদ একটা আশ্রমের নামে চলে যাবে, "

এটা শুনে আমি ডাক্তার খবর দিলাম!

ডাক্তার আমার 7 বছরের ছেলেকে বাচিয়ে তুললো।জিজ্ঞেস করলো কাব্য কোথায়? আমি উত্তর দিলাম জানি না।

ডাক্তার চলে যাবার পরে কাব্যকে আমাদের পুরনো গেস্ট রুমের মেঝেতে দাফন করে দিলাম এবং আবার মেঝেটা সুন্দর করে বানিয়ে নিলাম। আর বাহিরের সকলকে যানিয়ে দিলাম কাব্য তার প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গেছে।

কিন্তু ছেলে আমাকে দেখলেই এটা ওটা ছুরে মারত। আমাকে সহ্যই করতে পারতো না।

চলবে.....

#গল্প_সংসার 4th_prt | chokherjole.blogspot.com

#চোখের_জলে 

#প্রেম ও #বিয়ের_গল্পের_কথা 

#chokherjole